মাকে নির্যাতনকারী কুলাঙ্গার সকালে গ্রেফতার, বিকেলে জামিনে মুক্ত

10
মাকে নির্যাতনকারী কুলাঙ্গার সকালে গ্রেফতার, বিকেলে জামিনে মুক্ত

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়েরের পর সেই সেই কুলাঙ্গার সন্তান, চিহ্নিত জমির দালাল আলমগীরকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। কিন্তু এর কয়েক ঘন্টা পর আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায় এই কুলাঙ্গার।

নির্যাতনের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বৃদ্ধা মা হোসনে আরা (৭০) বাদী হয়ে মামলা কুলাঙ্গার সন্তানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ৭২ ঘন্টার মধ্যেই সেই কুলাঙ্গারকে গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার সকালে রাধানগর গ্রাম থেকে আলমগীরকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর বেলা দুইটার দিকে পুলিশ আলমগীরকে আদালতে পাঠায়। বিকেলে আলমগীরের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে আদালত তাঁকে জামিন দেন। মাকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতারের কয়েকঘন্টা পরই জামিন পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বলছে, আপন গর্ভধারিনী মাকে নির্যাতন কারী ছেলেকে আদালত কি করে একদিনেই জামিন দিলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদিও আদালতের বিষয়ে কোনো কিছু বলার অধিকার আমাদের নেই। কিন্তু একজন মাকে মারধর ও তার জমি লিখে নিয়ে তাকে গ্রাম ছাড়া করার পরও কুলাঙ্গার কুসন্তানকে সহজে জামিন দেয়ার বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন গ্রামবাসী।

এদিকে, জামিন পেয়ে এলাকায় গিয়ে পুনরায় মা, ভাবী ও মামার নাম উল্লেখ করে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে আলমগীর। থানা পুলিশ-কোর্ট কাচারী করে তাকে দমানো যাবে না বলে দম্ভোক্তিও করতে থাকে সে। এছাড়া, মা-ভাবী, মামা কেউ যদি এলাকায় আসে তাহলে তাদের কে উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে, এলাকায় এমন কথা বলে বেড়াচ্ছে সে।

মাকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত আলাল মাদবরের স্ত্রী হাসনা বানু (৭০) পাঁচ সন্তানের জননী। ভাগ্য বিড়ম্বিত এই জননীর জীবনের শেষার্ধে যখন শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, ঠিক সেই সময়ে ছোট ছেলে আলমগীর ছলচাতুরীর মাধ্যমে আপন বড় ভাইকে সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে নিরক্ষর মায়ের কোটি টাকার সম্পত্তির অর্ধেক নিজের নামে এবং অর্ধেক তিন ভাই-বোনের নামে লিখে নেয়। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মায়ের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে সে ও তার স্ত্রী। ছেলে আলমগীর ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঠাই নেন বড় ছেলের বউ শিউলী বেগমের ঘরে। ঘরে ঠাই দেয়ায় বড় ভাবীকে মারতে-ধরতে চায় আলমগীর। আলমগীরের ভয়ে এবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় মা হাসনা বানু এবং বড় ছেলের বউ। গ্রাম ছেড়ে শহরের আফাজনগর এলাকায় বসবাসকারী ষাটোর্ধ্ব ভাই আব্দুল রহিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মা। পরবর্তীতে বিচার শালিসের কথা বলে মাকে গ্রামে নিয়ে পুনরায় তাকে নির্যাতন করে কুলাঙ্গার আলমগীর।

এ বিষয়ে হাসনা বানু বলেন, তার স্বামী আলাল মাদবর ৮ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামী আলাল মাদবর এবং প্রবাসী বড় ছেলে মনির হোসেনের আয়ের টাকা দিয়ে ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। যার দাম বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। স্বামীর মৃত্যুর পরে সকল সন্তানরা মিলিত হয়ে পুরো জমিটি লিখে দেন মার নামে। পরবর্তীতে নিরক্ষর মাকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে ও ছল চাতুরীর মাধ্যমে বড় ছেলে মনির হোসেনকে বাদ দিয়ে ৩১ শতাংশ জমি লিখে নেয় অপর চার সন্তান। বক্তাবলী এলাকায় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেন মূলত এই কারসাজি করেন বলে জানায় মা হাসনা বানু।

তিনি বলেন, আমি অশিক্ষিত লেখা-পড়া করি নাই বাবা, আমার অন্য সন্তানরাও এতো চালাক না। আলমগীর হোসেনই সব অপকর্ম করেছে। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরে নিয়ে গিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয় আলমগীর। ৩১ শতাংশ জমির মধ্যে নিজের নামে ১৭ শতাংশ, আরেক ছিলে নাজিরের নামে ৭ শতাংশ ও দুই মেয়ের নামে ৭ শতাংশ জমি লিখে নেয় আলমগীর। সে পেশায় দলিল লিখক, আমার ভাইয়ের কাছ থেকে দলিল লিখনের কাজ শিখেছে সে। আমার ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখে আমাকেই নিঃস্ব করে পথের ফকির বানিয়েছে আলমগীর। কিছুদিন আগে জমি লিখে নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে, ছেলে আলমগীরের কাছে জমি ফেরত চান হাসনা বানু। এরপর থেকে গর্ভধারিনী মাকে মারধর শুরু করে কুলাঙ্গার সন্তান আলমগীর ও তার স্ত্রী