শামীম ওসমানসহ অনুসারীদের পরিবর্তন চায় নাঃগঞ্জবাসী

156
শামীম ওসমান, ভিপি বাদল, খোকন সাহা

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

সিটি মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে প্রতিবারই নানা নাটক মঞ্চস্থ করেন ‘একজন’ একথা জানে পুরো নগরবাসী। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তার অনুসারী কতিপয় নেতা ও লেতার দাবি, পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে কাউন্সিলরসহ মেয়র পদে। তবে তাদের এ দাবির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন সাধারণ জনগন। সাধারণ জনগনের দাবী, পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে এটা সত্যিই। তবে নাসিকে নয়, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে যথাযথ উন্নয়নে বারবার ব্যর্থ শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদেরই পরিবর্তন চায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পাঁচ বছর, পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পাঁচ বছর ও ২০১৮ থেকে বর্তমান সময়ে তিন বছরসহ মোট ১৩ বছর ধরে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এমপি হিসাবে জাতীয় সংসদে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন শামীম ওসমান। কিন্তু কার্যত দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেন নি তিনি। তার নির্বাচনী এলাকাগুলোকে এখনো অনেকেই গ্রাম হিসাবে চিনে।

ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর মতে, শামীম ওসমান যতোবার ক্ষমতায় এসেছেন ততোবারই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিবছরই বৃষ্টির মৌসুমসহ প্রায় সবসময়ই পানির নিচে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জসহ পুরো ডিএনডিবাসী। এসব বিষয়ে প্রতিবছরই জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিতও হয়। তারপরও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এলাকাবাসীর উন্নয়ন হয় না, হয়না তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন। তবে, জনসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়ন না হলেও ওসমানদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত একশ্রেণীর মানুষ এ সময় নিজেদের আখেড় গুছিয়ে নিজ নিজ ভাগ্য ঠিকই পরিবর্তন করে ফেলেছেন বলে দাবী নারায়ণগঞ্জবাসীর। আর তাই, পরিবর্তনের যে হাওয়া নারায়ণগঞ্জে লেগেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে এসব ব্যর্থতার দায় কাধে নিয়ে শামীম ওসমানের উচিত পদত্যাগ করে নতুনদের ও যোগ্যদের সুযোগ করে দেয়া।

আরও জানা যায়, ২০০৩ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান, ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র ও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সিটি মেয়র নির্বাচিত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। টানা ১৮ বছরে প্রথমে পৌরসভার চেয়ারম্যান ও পরে নাসিক মেয়র হিসাবে সিটির দায়িত্বে আছেন তিনি।

নগরবাসীর মতে, তিনি যখন পৌরসভার চেয়ারম্যান হন তখন পৌরসভার তেমন কোনো ফান্ড ছিলো না কিন্তু এই ১৮ বছরে পৌরসভার ফান্ড হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে শত শত কোটি টাকার বাজেট দেন। ২০২১-২২ অর্থবছরেও প্রায় ৬৮৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র আইভী।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সর্বকালের সবচেয়ে বেশী উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে আইভীর এই তিন মেয়াদে এমনটাই দাবী নগরবাসীসহ পুরো জেলাবাসীর। নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ড্রেন, কালভার্ট, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, প্রতিটি সড়কে আলোর ব্যবস্থাসহ শহর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জে উন্নয়ন করছেন সমানতালে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১০০ ফুট চওড়া রাস্তা পাল্টে দিয়েছেন বন্দর এলাকা ও বন্দরবাসীর জীবনমান। শেখ রাসেল পার্ক ও লেক, জল্লারপাড় লেক, বাবুরাইল খালসহ চলমান বেশ কয়েকটি বড় প্রজেক্টে নারায়ণগঞ্জ দিনে দিনে আধুনিক ও উন্নত শহরে পরিণত হচ্ছে। দেড়শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ লেক-পার্কসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর। এসবই হচ্ছে দৃঢ়তার মূর্ত প্রতীক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও উন্নয়নের পাগল নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর হাত ধরে।

এতো এতো উন্নয়নের পরেও অনেকেই বলে মেয়র পদে নাকি পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, আসলে মেয়র পদে নয়, ব্যর্থতার তুঙ্গে থাকা শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদেরই পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করে নারায়ণগঞ্জবাসী। তাদের মতে, শুধু শামীম ওসমান নয় পরিবর্তন হওয়া দরকার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও। এ পদটি দখল করে আছে সর্বমহলে পরিচিত মতলব থেকে আগত লাঙ্গলমার্কা একজন নেতা। যাকে সাংসদ সেলিম ওসমান কখনো কখনো লেতা বলেও ডাকেন। যিনি মেয়রের এতোসব উন্নয়ন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন চায় আওয়ামীলীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, যারা শামীম ওসমানের বন্ধু হিসাবে বড় পদ-পদবি দখল করে আছেন তাদেরও উচিত সরে গিয়ে নতুনদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের তৃণমূলের এক কর্মী বলেন, দাদা আর কতো, ২৭ বছর ধরে নগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারীর পদ আকড়ে আছেন, নামেন না এবার, সরেন না এবার, নতুনদের জায়গা করে দেন না।