অবশেষে কুলাঙ্গার আলমগীর কারাগারে

245

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

তিনবার সুযোগ পেয়েও আপোষ মিমাংসা না করায় শেষ রক্ষা হয়নি মাকে নির্যাতনকারী কুলাঙ্গার সেই আলমগীরের। অবশেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

বুধবার (০৮ মে) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রট ৪র্থ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থণা করলে বিজ্ঞ বিচারক কাউসার আলম জামিন না মঞ্জুর করে ঐ কুলাঙ্গারকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে, পরপর ৩ বার আপোষ মিমাংসার সময় বেঁধে দেয় আদালত।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের অভিযোগে কুলাঙ্গার সন্তান, চিহ্নিত জমির দালাল আলমগীরের বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেন মা হাসনা বানু। এই মামলায় আসামী আলমগীরকে গ্রেফতারে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশের পরদিন ১৯ এপ্রিল ফতুল্লা থানা পুলিশ বক্তাবলীর রাধানগর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ঐদিন বিকেলে জামিন আবেদন করলে ৩ দিনের মধ্যে আপোষ মিমাংসার শর্তে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

পরবর্তীতে ৩ দিনের মধ্যে কোনো আপোষ মিমাংসা না করে আবারও জামিন প্রার্থণা করে আসামী আলমগীরের আইনজীবীরা। এদিনও আদালত ১৫ দিনের জামিন মঞ্জুর করেন। একইসাথে ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি মিমাংসার জন্য লিগ্যাল এইডে পাঠান বিজ্ঞ বিচারক। কিন্তু ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো আপোষ মিমাংসার চেষ্টা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন লিগ্যাল এইডের বিজ্ঞ বিচারক মুক্তা মন্ডল। পরবর্তীতে তিনি মামলাটি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রট ৪র্থ আদালতে প্রেরণ করেন। আজ বুধবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রট ৪র্থ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক কাউসার আলম তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।

মাকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত আলাল মাদবরের স্ত্রী হাসনা বানু (৭০) পাঁচ সন্তানের জননী। ভাগ্য বিড়ম্বিত এই জননীর জীবনের শেষার্ধে যখন শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, ঠিক সেই সময়ে ছোট ছেলে আলমগীর ছলচাতুরীর মাধ্যমে আপন বড় ভাইকে সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে নিরক্ষর মায়ের কোটি টাকার সম্পত্তির অর্ধেক নিজের নামে এবং অর্ধেক তিন ভাই-বোনের নামে লিখে নেয়। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মায়ের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে সে ও তার স্ত্রী। ছেলে আলমগীর ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঠাই নেন বড় ছেলের বউ শিউলী বেগমের ঘরে। ঘরে ঠাই দেয়ায় বড় ভাবীকে মারতে-ধরতে চায় আলমগীর। আলমগীরের ভয়ে এবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় মা হাসনা বানু এবং বড় ছেলের বউ। গ্রাম ছেড়ে শহরের আফাজনগর এলাকায় বসবাসকারী ষাটোর্ধ্ব ভাই আব্দুল রহিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মা। পরবর্তীতে বিচার শালিসের কথা বলে মাকে গ্রামে নিয়ে পুনরায় তাকে নির্যাতন করে কুলাঙ্গার আলমগীর।

এ বিষয়ে হাসনা বানু বলেন, তার স্বামী আলাল মাদবর ৮ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামী আলাল মাদবর এবং প্রবাসী বড় ছেলে মনির হোসেনের আয়ের টাকা দিয়ে ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। যার দাম বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। স্বামীর মৃত্যুর পরে সকল সন্তানরা মিলিত হয়ে পুরো জমিটি লিখে দেন মার নামে। পরবর্তীতে নিরক্ষর মাকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে ও ছল চাতুরীর মাধ্যমে বড় ছেলে মনির হোসেনকে বাদ দিয়ে ৩১ শতাংশ জমি লিখে নেয় অপর চার সন্তান। বক্তাবলী এলাকায় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেন মূলত এই কারসাজি করেন বলে জানায় মা হাসনা বানু।