সম্পদ লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের অভিযোগ

5
সম্পদ লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

মায়ের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়ে সেই মাকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা থানাধীন বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের জমির দালাল হিসেবে পরিচিত আলমগীরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গর্ভধারিনী আলমগীর সহ চার সন্তানের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায, ঐ গ্রামের মৃত আলাল মাদবর তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে রেখে মৃত্যু বরন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মা হোসনে আরা বেগম ওরফে হাসনা বানু স্বামীর দেয়া এবং নিজের ক্রয়কৃত চল্লিশ শতাংশ জমির মালিক হন। পরবর্তীতে এই জমিতে ভেজাল আছে এবং এই ভেজাল সংশোধন করার কথা বলে নিরক্ষর সরল-সহজ মা (হাসনা বানু)কে ফতুল্লা সাব রেজিস্টার অফিসে নিয়ে তারই ছেলে আলমগীর নিজের নামে অর্ধেক জমি এবং বাকী এক ছেলে এবং দুই মেয়ের নামে বাকী অর্ধেক জমি লিখে নেন। মা হাসনা বানুকে সম্পূর্ণ জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত করে কুলাঙ্গার জমির দালাল আলমগীর। তবে, তার আরেক ভাই মনির হোসেনকে কোনো সম্পত্তি দেয়নি। অথচ এই মনির হোসেনই বছরের পর বছর প্রবাসে থেকে জমি কেনার জন্য পিতা মাতাকে টাকা দেন। মনির হোসের এখনো একজন প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে জানান হাসনা বানু।

এখানে উল্লেখ্য, পুত্র আলমগীর নিজেই একজন দলিল লিখক ও জমির দালাল হিসেবে বক্তাবলীতে পরিচিত। হাসনা বানু থানায় তার লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, তার কাছ থেকে জমি লিখে নেয়ার আগে কুলাঙ্গার আলমগীরসহ চার সন্তানরা তাকে খুবই যত্ন করেছে, যা কিনা সম্পূর্ণ অভিনয় ছিলো। বৃদ্ধা হাসনা বানু তাদের অভিনয় বুঝতে পারেননি। কিন্তু প্রতারনার মাধ্যমে জমি লিখে নেয়ার পর গর্ভজাত সন্তান হয়ে আলমগীর এবং নাজির হোসেন তাকে একাধিকবার মারধর করেছে।

সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ হাসনা বানু আলমগীরকে তার জমি ফেরৎ দিতে বললে, কুলাঙ্গার আলমগীর মায়ের চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে নির্মম ভাবে মারধর করে। এতে তিনি আহত হয়ে বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পরে ছিলেন। পরে তিনি গ্রামের সকল মানুষ এবং গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কাছে এই কুলাঙ্গার পুত্রের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন। কিন্তু পুত্র আলমগীর কাউকেই পাত্তা দেয়নি। এক পর্যায়ে বৃদ্ধা মা হাসনা বানু বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ শওকত আলীর স্বরনাপন্ন হন। শওকত আলীর কাছে বিচার চাইলে চেয়ারম্যান শওকত বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য আলমগীর সহ বিবাধী ছেলে মেয়েদের ডাকলেও তারা চেয়ারম্যানের ডাকে সারা দেয়নি। পরে অসহায় বৃদ্ধা বাধ্য হয়ে নিজের সন্তানদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আলমগীরসহ অন্য আসামীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করে থানা পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আসামীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে আজ বক্তাবলীতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পালিয়ে যায়।

এদিকে, এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পুত্র আলমগীরকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে সে তার মায়ের কাছ থেকে জমি লিখে নেয়ার কথা স্বীকার করে। কিন্তু জমি ফেরৎ দেয়ার কথাও স্বীকার করে। এছাড়া তার মায়ের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে জমি লিখে নেয়ার কথা অস্বীকার করে এবং মা নিজেই তাকে এবং তাদেরকে জমি লিখে দিয়েছে বলে দাবি করে। পাঁচ ভাই বোনের মাঝে সে একাই কেনো অর্ধেক জমি লিখে নিলো এবং বড় ভাই মনির হোসেনকে কোনো এক শতাংশ জমিও দেয়া হলোনা এই প্রশ্ন করলে সে সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেনি।

অপরদিকে, নিজের মায়ের কোটি টাকার সম্পত্তি প্রতারনার মাধ্যমে লিখে নেয়া এবং মায়ের উপর নির্যাতন করার বিষয়টি বক্তাবলী এলাকায় জানাজানি হলে গোটা এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীও প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।