নারায়ণগঞ্জে পাঁচ লাখ বৃক্ষ রোপনের ঘোষণা জেলা প্রশাসকের

14
নারায়ণগঞ্জে পাঁচ লাখ বৃক্ষ রোপনের ঘোষণা জেলা প্রশাসকের

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জে ‘বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পরিচিতি’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বুধবার (০৩রা এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

বিএফআরআই এর বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং প্রতিষ্ঠানটির তথ্য ও প্রযুক্তি শাখার সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মো. জহিরুল আলম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্মশালার উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি ঐহিত্যবাহী শহর। ৪০০ বছরের ঐতিহ্য আকড়ে আছে নারায়ণগঞ্জ। এই নারায়ণগঞ্জ বর্তমানে দেশের সবচেয়ে দূষিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দিন দিন এখানে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। আমরা শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে বনাঞ্চল গড়ে তুলতে চাই। এই লক্ষ্যে আগামী ২/৩ মাসে নারায়ণগঞ্জে ৫ লক্ষ গাছ লাগাতে চাই।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এখানে যানবাহনের চলাচল বেশী হওয়ায় ধুলা-বালু ও সিসাসহ নানা কারণে দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব থেকে রক্ষায় বৃক্ষের কোনো বিকল্প নেই। রেললাইনের পাশে, সড়কের পাশে, ছাদ বাগান সহ বিভিন্ন উপায়ে বনায়ন করা যায়। এছাড়া, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বন বিভাগের কাজ আছে, সেখানে বনায়ন করা যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় সামাজিক বনায়ন করে মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্যন করছে। এখানে প্রতি মাসে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মিটিং হওয়া দরকার। নদীগুলোর যে অবস্থা তা আপনারা সবাই জানেন। আমি গতকালও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কাছে জানিয়েছি, এখানে বন বিভাগের সেট আপ দেয়ার জন্য।

কর্মশালায় উপস্থিত থেকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, আমরা যখন স্কুলে পড়া-লেখা করতাম, তখন প্রায়ই বৃক্ষ রোপন অভিযান হতো। এখন যা প্রায় বন্ধই বলা চলে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের দুপাশে আগে হাজার হাজার গাছ ছিলো। নগরায়নের প্রয়োজনে সেই সব গাছ কাটা হয়েছে, সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখন আর গাছ লাগানো হয় না। একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি বছরে বায়ূদুষণে প্রায় আড়াই লাখ লোক মারা যায়, যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশী লোক মারা যায়। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই, ৫ লাখ বৃক্ষ রোপনের যে ঘোষণা জেলা প্রশাসক দিয়েছে তার প্রশংসা করে প্রেসক্লাব সম্পাদক বলেন, আমি নিজে একজন এজমাহ রোগী, আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয় এবং প্রতিদিন মোনাস ১০ নামক ঠান্ডা জনিত ওষুদ সেবন করতে হয়। কিন্তু আমরা যদি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে কোনো গ্রামে গিয়ে ১৫ দিন থাকি, বা দেশের বাইরে যেমন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশে যাই, তখন আমাদের কোনো ওষুধ সেবন করতে হয় না। ওখানে প্রাকৃতিক ও সুন্দর পরিবেশ থাকে। নারায়ণগঞ্জেও আমরা এমন পরিবেশ ফিরে পেতে চাই। ৫ লাখ বৃক্ষ রোপনের যে ঘোষণা জেলা প্রশাসক দিয়েছেন, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে অচিরেই এই বৃক্ষ রোপনের আহবান জানান তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় ৫ লাখ বৃক্ষ রোপনের যে ঘোষণা দিয়েছে তা অতি শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে। এই বৃক্ষ শুধু রোপন করলেই হবে না, কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন বছর এই গাছগুলোকে পরিচর্যা করতে হবে। এতে প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে নারায়ণগঞ্জে শীঘ্রই এ বৃক্ষ রোপন করা হবে।

কর্মশালার শুরুতে ‘বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টরী দেখানো হয়। পরে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রযুক্তিসমূহ উপস্থাপন করেন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও অসীম কুমার পাল।

কর্মশালায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, স্থায়ী সদস্য রফিকুল ইসলাম রফিক, আনোয়ার হাসান, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিআরডিবি, সমবায় অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, তথ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, এনজিও প্রতিনিধি, কাঠ ব্যবসায়ী, নার্সারি, করাতকল ও ফার্নিচার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।