না:গঞ্জের রাজপথ বিএনপির দখলে

69
না:গঞ্জের রাজপথ বিএনপির দখলে

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামীলীগ-বিএনপি উভয় দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবারের নির্বাচন। কেননা আওয়ামীলীগ চাইবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে, পক্ষান্তরে বিএনপির জন্য এটি অনেকটা অস্তিত্বের লড়াই। ফলে রাজপথ দখলে নিতে ব্যস্ত দু দলই।

তবে, নারায়ণগঞ্জের রাজপথ বর্তমানে বিএনপির দখলে আছে বলেই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকমহল। কেননা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ আপাতত ব্যস্ত জেলা-মহানগরের সম্মেলন নিয়ে। কারা হচ্ছেন সভাপতি-সম্পাদক, কোন বলয়ের হাতে আসছে নেতৃত্ব এ নিয়েই মাথা ব্যাথা দলটির নেতাকর্মীদের।

অপরদিকে, আওয়ামীলীগের বর্তমান নিস্ক্রীয়তাকে কাজে লাগিয়ে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখিয়ে রাজপথ নিজেদের দখলে রেখেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে আলাদা আলাদা বিক্ষোভ সমাবেশ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি, মহানগর বিএনপি ও মহানগর কমিটির বিরোধী নেতাকর্মীরা।

এদিন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা বিএনপি। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে থাকে এ সমাবেশে। এছাড়া, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ছাত্রদল, মহিলাদল, শ্রমিকদলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়।

এদিকে, চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহানগর বিএনপি। এতে মহানগরের আওতাধীন সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়। এ সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম।

অপরদিকে, নগরীর মন্ডলপাড়ায় আরেকটি মহানগর বিএনপির ব্যানারে পৃথক সমাবেশ করে বিরোধী নেতাকর্মীরা। এই সমাবেশেও পদত্যাগকারী ও মূল কমিটির সাথে যুক্ত না হওয়ায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী যোগদান করে। এদিন নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের তিনটি স্থানে পৃথক তিনটি বিক্ষোভ সমাবেশ করার কারণে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ ছিলো বিএনপির দখলে।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কের এক লেন দখলে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান আবদু, বাছির উদ্দিন বাচ্চু, মোশাররফ হোসেন, আশরাফুল হক রিপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, জেলা যুবদল আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকন, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রাসেল মাহমুদ, ছাত্রদল নেতা দোলন প্রমুখ।

এসময় জেলা বিএনপির এ সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আমরা দুর্ভিক্ষ চাই না। এই স্বাধীণ বাংলাদেশে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা ডাল-ভাত খেয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশে, স্বাধীনভাবে, বুক ফুলিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। এই অবৈধ শেখ হাসিনার শাসনে আমরা আর দুর্ভোগে পরতে চাই না। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় যে সমাবেশ হবে, সেই সমাবেশের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিদায় ঘন্টা বাজানো হবে।

মহানগর বিএনপির সমাবেশ শুরুর পর থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করতে করতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে নেতাকর্মীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব এড. আবু আল ইফসুফ খান টিপু। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা জামাল উদ্দিন কালু, নবগঠিত কমিটির মনির হোসেন খান, এম এইচ মামুন, মহানগর যুবদলের আহবায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, যুগ্ম আহবায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি প্রমুখ।

মন্ডলপাড়ায় মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দেন এড. জাকির হোসেন, আতাউর রহমান মুকুল ও আব্দুস সবুর খান সেন্টু। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এড. ভাসানী, ফারুক খান, আমিনুল ইসলাম মিঠু, যুবদল নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সরকার আলম, রানা মুজিব প্রমুখ।

এছাড়া মহানগর বিএনপি নেতা জাকির খানের সমর্থকরাও একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক, যুবদল নেতা সনেট প্রমুখ।

বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখে সাধারণ জনগন মনে করছে দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জের রাজপথ বর্তমানে বিএনপির দখলে। তারা যদি এভাবেই রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে পারে তাহলে নিজেদের যে দাবি তা আদায়ে জোরালো ভুমিকা রাখতে পারবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।