কুলাঙ্গার আলমগীরের কান্ড, মামা-ভাবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ

15
গর্ভধারিনী মায়ের চোখের জলেও মন গলেনি সন্তানের

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

সমাজ, আইন, প্রশাসন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না বক্তাবলী এলাকার চিহ্নিত জমির দালাল আলমগীর হোসেন। মাকে গ্রাম ছাড় করার পর আশ্রয় দাতা মামা ও বড় ভাইয়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে এবার মামলা দায়ের করলো এই কুলাঙ্গার। এমনি অভিযোগ করেছেন ষাটোর্ধ্ব মামা আব্দুল রহিম ও বড় ভাই মনির হোসেনের স্ত্রী শিউলী বেগম।

জানা গেছে, বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত আলাল মাদবরের স্ত্রী হাসনা বানু (৭০) পাঁচ সন্তানের জননী। ভাগ্য বিড়ম্বিত এই জননীর জীবনের শেষার্ধে যখন শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, ঠিক সেই সময়ে ছোট ছেলে আলমগীর ছলচাতুরীর মাধ্যমে আপন বড় ভাইকে সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে নিরক্ষর মায়ের কোটি টাকার সম্পত্তির অর্ধেক নিজের নামে এবং অর্ধেক তিন ভাই-বোনের নামে লিখে নেয়। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মায়ের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে সে ও তার স্ত্রী। ছেলে আলমগীর ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঠাই নেন বড় ছেলের বউ শিউলী বেগমের ঘরে। ঘরে ঠাই দেয়ায় বড় ভাবীকে মারতে-ধরতে চায় আলমগীর। আলমগীরের ভয়ে এবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় মা হাসনা বানু এবং বড় ছেলের বউ। গ্রাম ছেড়ে শহরের আফাজনগর এলাকায় বসবাসকারী ষাটোর্ধ্ব ভাই আব্দুল রহিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মা। মাকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে এবার মামা ও ভাবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে কুলাঙ্গার আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে।

এদিকে, বৃদ্ধা মায়ের সম্পত্তি হজম করতে ও জন্মদাত্রী মাকে মারধরের ঘটনায় আলমগীরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে স্থানীয় দুইজন আওয়ামীলীগ নেতা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ দুজন নানা ফন্দি ফিকির করছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে একজন কুলাঙ্গার আলমগীরের দু:সম্পর্কের নানা শ^শুর, যিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে পর শামীম ওসমানের নেতৃত্ব ত্যাগ করে কবরী বলয়ে যোগ দিয়েছিলেন। অপরজন, স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা, যিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসতে চায় বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিজে মা হয়ে সন্তানদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগের পরও শামীম ওসমানকে মাইনাস করতে চাওয়া ঐ আওয়ামীলীগ নেতা ও টাকার লোভী অপর আওয়ামীলীগ নেতার ইন্ধনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে জমির দালাল আলমগীর। এ বিষয়ে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে এলাকাবাসী।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভাগ্য বিড়ম্বিত এক জননী হাসনা বানু, বয়স ৭০ এর চেয়েও বেশী। যে বয়সে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, সেই বয়সেই তার ওপর নেমে এসেছে চরম অবজ্ঞা, অবহেলা আর নির্যাতনের খড়গ। কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে চরম নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিলো ছেলে ও তার স্ত্রী। ছেলে-বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে তাকে। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায়।

অঝরে চোখের পানি গড়িয়ে অসহায় হাসনা বানুর শীর্ণ দেহ আরো জীর্ণ-শীর্ণ হলেও মন গলেনি তার নাড়িছেঁড়া সন্তানের। অক্ষরজ্ঞানহীণ মা হাসনা বানুকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে ও নানা ছলচাতুরী করে স্বামী ও বড় সন্তান মনির হোসেনের ক্রয়কৃত সম্পত্তি নিজের এবং অপর তিন ভাই-বোনের নামে লিখিয়ে নেয় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত সন্তান আলমগীর হোসেন। বিষয়টি বুঝতে পারলে জমি ফেরত চায় বৃদ্ধা মা, আর এতেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে তার উপর। নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামীর ভিটেমাটি ছেড়ে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়িতে।

হাসনা বানু জানান, তার স্বামী আলাল মাদবর ৮ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামী আলাল মাদবর এবং প্রবাসী বড় ছেলে মনির হোসেনের আয়ের টাকা দিয়ে ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। যার দাম বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। স্বামীর মৃত্যুর পরে সকল সন্তানরা মিলিত হয়ে পুরো জমিটি লিখে দেন মার নামে। পরবর্তীতে নিরক্ষর মাকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে ও ছল চাতুরীর মাধ্যমে বড় ছেলে মনির হোসেনকে বাদ দিয়ে ৩১ শতাংশ জমি লিখে নেয় অপর চার সন্তান। বক্তাবলী এলাকায় জমির দালাল হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেন মূলত এই কারসাজি করেন বলে জানায় মা হাসনা বানু।

তিনি বলেন, আমি অশিক্ষিত লেখা-পড়া করি নাই বাবা, আমার অন্য সন্তানরাও এতো চালাক না। আলমগীর হোসেনই সব অপকর্ম করেছে। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরে নিয়ে গিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয় আলমগীর। ৩১ শতাংশ জমির মধ্যে নিজের নামে ১৭ শতাংশ, আরেক ছিলে নাজিরের নামে ৭ শতাংশ ও দুই মেয়ের নামে ৭ শতাংশ জমি লিখে নেয় আলমগীর। সে পেশায় দলিল লিখক, আমার ভাইয়ের কাছ থেকে দলিল লিখনের কাজ শিখেছে সে। আমার ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখে আমাকেই নিঃস্ব করে পথের ফকির বানিয়েছে আলমগীর। কিছুদিন আগে জমি লিখে নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে, ছেলে আলমগীরের কাছে জমি ফেরত চান হাসনা বানু। এরপর থেকে গর্ভধারিনী মাকে মারধর শুরু করে কুলাঙ্গার সন্তান আলমগীর ও তার স্ত্রী। অন্য সন্তানরাও সায় দেয় আলমগীরকে।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধা হাসনা বানু ওরফে হাসনা আরা বেগম। অভিযোগ দায়েরের পর সন্তানদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। খবর পেয়ে এলাকায় ছেড়ে পালায় আসামীরা। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মাকে ব্যাপক মারধর করে কুসন্তান আলমগীর ও তার স্ত্রী। একইসাথে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে। এসময় প্রবাসী সন্তান মনির হোসেনের স্ত্রী বৃদ্ধা শ্বাশুরীকে আশ্রয় দেন নিজের ঘরে। এতে ক্ষীপ্ত হয় মনির হোসেনের স্ত্রী ও হাসনা বানুকে আবারও মারধর করে আলমগীরসহ অন্য ভাই-বোনেরা। এসময় হত্যার হুমকি দেয়া হয় তাদের। অবশেষে নিজেদের জীবন বাঁচাতে ছেলের বউকে সাথে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেন হাসনা বানু।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আলমগীর তার মায়ের কাছ থেকে জমি লিখে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, জমি ফেরৎ দিয়ে দিবো। তবে, প্রতারনার মাধ্যমে জমি লিখে নেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, মা নিজেই তাকে এবং তার অন্য ভাই-বোনেদের জমি লিখে দিয়েছে। পাঁচ ভাই বোনের মাঝে সে একাই কেনো অর্ধেক জমি লিখে নিলো এবং বড় ভাই মনির হোসেনকে কেন এই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হলো এমন প্রশ্ন করলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি আলমগীর হোসেন।

এদিকে পুলিশ বলছে, অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না। বৃদ্ধা মার সম্পত্তি লিখে নেয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মফিজুল ইসলাম বলেন, অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে, শীঘ্রই আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।

অপরদিকে, নিজের মায়ের কোটি টাকার সম্পত্তি প্রতারনার মাধ্যমে লিখে নেয়া এবং মায়ের উপর নির্যাতন করার বিষয়টি বক্তাবলী এলাকায় জানাজানি হলে গোটা এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীও প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।