আগামী নির্বাচনে কপাল পুড়তে পারে সেলিম ওসমানের!

49
আগামী নির্বাচনে কপাল পুড়তে পারে সেলিম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ সমাচার:

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। স্বাধীণতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দুইবার করে জয়লাভ করেছে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ। আর জাতীয় পার্টি ৪ বার জয়লাভ করে নিজেদের শক্ত ঘাটি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও গত দুবার জোটের কারণে এই আসনটিতে ছাড় দেয় জাপাকে ছাড় দেয় আওয়ামীলীগ। তবে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ছাড় না দেয়ার কথা জানান আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বরাবরের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনেকটা হেভিওয়েট প্রার্থী সংকটে ভুগছে আওয়ামীলীগ। শক্তিশালী প্রার্থী সংকটে ভুগলেও আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতা এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা গেছে। এরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত এবং মেয়র আইভীর ভাই, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল।

মনোনয়নের বিষয়ে জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান। তারা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। যদি কোনো কারণে পারভীন ওসমান এ আসনে মনোনয়ণ নাও চান, তাহলে তার পুত্র আজমেরী ওসমান চাইবেন মনোনয়ন এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

তবে, যদি আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির জোট ভেঙ্গে যায় এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে কপাল পুড়তে পারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এমনটাই দাবী রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের।

জাপার মতো বিএনপি থেকেও একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম। যিনি এর আগে দুবার এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আবার জোটগত কারণে গতবারের ন্যায় এবারও এস এম আকরাম হতে পারেন বিএনপি জোটের প্রার্থী। এছাড়া মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থাকা এড. সাখাওয়াত হোসেন খানও এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার একজন শক্ত দাবিদার।

এদিকে, খোদ জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, সেলিম ওসমান তো কোনো রাজনীতিবীদই না। প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানের কাধে ভর দিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ এর সভাপতি হয়েছেন বেশ কয়েকবার। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর কে পাবে এই আসনে মনোনয়ণ সেলিম ওসমান নাকি পারভীন ওসমান তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ দেখা দেয়। পরে শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে সেলিম ওসমানকে প্রার্থী ঘোষণা করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
সেলিম ওসমান সম্পর্কে আরও জানা গেছে, এমপি হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। একজন স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করিয়ে সারা বাংলাদেশে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিলেন বিতর্কিত এই ব্যক্তি। শুধু কান ধরা নয়, নির্বাচনী এলাকার প্রায় সকল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের ফেল করিয়ে এবং নৌকা প্রতীক সম্পর্কে কুরুচীপূর্ণ বক্তব্য দিয়েও বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন সেলিম ওসমান।

আরও জানা গেছে, যার বদৌলতে এমপি হয়েছেন সেই প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী-পুত্র সম্পর্কেও কটুক্তি করতে পিছপা হননা তিনি। কয়েকবছর আগে নাসিক ১৮নং ওয়ার্ডে আজমেরী ওসমানকে উদ্দেশ্য করে সেলিম ওসমান বলেন, কোথাকার হাজী সে। কিসের হাজী সাহেব। এছাড়াও আজমেরী ওসমান ও তার মা পারভীন ওসমানের টাকার উৎস নিয়েও কথা বলেছিলেন অকৃতজ্ঞ এই দেবর এমনটাই জানায় জাপা নেতাকর্মীরা।

শুধু কি তাই, নাসিম ওসমানের সময়কার পার্টি অফিস ভেঙ্গে গোটা জেলায় জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এককথায় বলতে গেলে, নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসই করে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজ তো দুরে থাক, তার সামনেও ভীড়তে পারেনা কেউ। তার ভাবখানা এমন যে, গুটি কয়েকজনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বানিয়েই সব জয় করে ফেলেছেন তিনি।

তার এতো বিতর্কিত ঘটনার কারণে খোদ জাতীয় পার্টির হাইকমান্ডও তার উপর বিরক্ত বলে জানা গেছে। তাই আওয়ামীলীগ-জাপার জোট যদি অক্ষত থাকেও, তারপরও সেলিম ওসমানকে আর মনোনয়ন দেয়া হবেনা বলেই নিশ্চিত করে নির্ভরযোগ্য সুত্র। সুত্রের দাবি, এই আসনটিতে সবচেয়ে অবহেলিত ব্যক্তি পারভীন ওসমান। তাকে অথবা তার সন্তান আজমেরী ওসমানকেই দেয়া হতে পারে জাপার মনোনয়ন। আর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তো বহুদিন ধরেই এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী চাইছেন। সবদিক বিবেচনায় কপাল পুড়বে সেলিম ওসমানের এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

জোট না থাকলে ক্ষমতাসীণ আওয়ামীলীগও খালি মাঠে গোল দিতে দিবে বলে না ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদির। আর সেই লক্ষ্যে তিনি কিছুদিনের মধ্যেই প্রস্তুত করবেন নির্বাচনের ক্ষেত্র। চুনকা পরিবার থেকে তিনি যে আগামী নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইবেন এটা প্রায় নিশ্চিৎ। যে কয়েকটি কারণে আবদুল কাদিরের মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা মোটামুটি নিশ্চিত বলা চলে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো এই আসনে তিনি ছাড়া আওয়ামীলীগের মজবুত কোন প্রার্থী নেই বললেই চলে।

সবশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া সদর উপজেলা নির্বাচনেও অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি, যেখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থীই ছিল তিন জন। আরো একটি কারণ হলো তার সাদাসিদা জীবনযাপন। তিনি প্রয়াত জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে জামাত পাশাপাশি একবার নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান ও পরপর দুইবার নির্বাচিত মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট বোন জামাই। এসকল দিক বিবেচনায় রেখে খোদ আওয়ামীলীগের একাধিক সিনিয়র নেতারা মনে করেন, এই আসনে আব্দুল কাদির ব্যতিত অন্য কোন যোগ্য প্রার্থী নেই।

তবে, সকল দলই চাইছে পরিচ্ছন্ন, গোছানো ও ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে। দলীয় বিবেচনায় কারা হবেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জাপার প্রার্থী তার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে আসনটির সাধারণ জনগন ও দলীয় নেতাকর্মীদের।